ছাত্র বিক্ষোভকারীরা তাদের বিপ্লবকে শক্তিশালী করতে নতুন দলের পরিকল্পনা করছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ক্ষমতাচ্যুত করা ছাত্র বিক্ষোভকারীরা দ্রুত নির্বাচনের জন্য বাংলাদেশের দুটি প্রধান রাজনৈতিক দলের আহ্বান প্রত্যাখ্যান করেছে এবং চারজন প্রতিবাদী নেতার সাক্ষাৎকার অনুযায়ী, সংস্কারের জন্য নিজেদের দল গঠনের কথা বিবেচনা করছে।
তাদের আশা: গত ১৫ বছরের পুনরাবৃত্তি যেন আর না হয়, যেখানে হাসিনা তার লৌহ মুষ্টি দিয়ে দেশের প্রায় ১৭০ মিলিয়ন মানুষ শাসন করেছেন।
জুন পর্যন্ত, মুষ্টিমেয় ছাত্র যাদের বেশিরভাগই ২০ বছরের নিচে তারা জনসংখ্যার কিছু অংশের জন্য সরকারি চাকরি সংরক্ষণের একটি আইনের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ সংগঠিত করতে শুরু করেছিল।
কয়েক সপ্তাহের মধ্যে, হাসিনার সরকার কোটা বিরোধী আন্দোলনকারীদের উপর দমন-পীড়নের বর্বরতায় জনগণের ক্ষোভের উত্থানে ভেসে যায়। ১৯৭১ সালে পাকিস্তান থেকে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের পর থেকে এরূপ একক বৃহত্তম সহিংসতায় কমপক্ষে ৩০০ জন নিহত হয়েছিল।
এই আন্দোলনটিকে একটি জেনারেল জেড (Generation-Z) বিপ্লব হিসাবে প্রশংসিত করা হয়েছিল, যা বছরের পর বছর বেকারত্ব বৃদ্ধি, ক্লেপ্টোক্রেসির অভিযোগ এবং নাগরিক স্বাধীনতা হ্রাস হওয়ার কারণে তরুণ বাংলাদেশীদের ক্ষোভের দ্বারা উদ্বুদ্ধ হয়েছিল।
নোবেল শান্তি বিজয়ী মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে একটি অন্তর্বর্তী সরকার – যার মধ্যে সিনিয়র পদে দুই ছাত্র নেতা রয়েছে – এখন দেশ পরিচালনা করছে।
গত তিন দশকের বেশির ভাগ সময় ধরেই বাংলাদেশ শাসিত হয়েছে হাসিনার আওয়ামী লীগ বা তার প্রতিদ্বন্দ্বী খালেদা জিয়ার বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল, যাদের দুজনেরই বয়স ৭০-এর দশকে।
ছাত্র নেতারা দ্বৈত প্রথার অবসান ঘটাতে একটি রাজনৈতিক দল গঠনের বিষয়ে আলোচনা করছেন, মাহফুজ আলম বলেছেন, যিনি সরকার এবং শিক্ষক ও কর্মীদের মতো সামাজিক গোষ্ঠীগুলির মধ্যে যোগাযোগের জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত একটি কমিটির সভাপতিত্ব করেন।
২৬ বছর বয়সী একজন আইনের ছাত্র রয়টার্সকে (Reuters) বলেছেন, প্রায় এক মাসের মধ্যে একটি সিদ্ধান্ত নিতে হবে, প্রতিবাদকারী নেতাদের একটি প্ল্যাটফর্মে আসার সিদ্ধান্ত নেওয়ার পূর্বে সাধারণ ভোটারদের সাথে ব্যাপকভাবে পরামর্শ করতে হবে।
তাদের আন্দোলনের রাজনৈতিক ভবিষ্যতের জন্য ছাত্রদের পরিকল্পনার বিশদ বিবরণ আগে জানানো হয়নি।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা অনুষদের ফটকে তিনি বলেন, “দুই রাজনৈতিক দলের প্রতি মানুষ সত্যিই ক্লান্ত। আমাদের ওপর তাদের আস্থা আছে।”
তাহমিদ চৌধুরী, আরেক ছাত্র সমন্বয়কারী যিনি হাসিনার পদত্যাগের জন্য আন্দোলন করেছিলেন, লেছিলেন যে তাদের একটি রাজনৈতিক দল গঠন করার একটি “উচ্চ সম্ভাবনা” ছিল। তারা এখনও তাদের কর্মসূচী নিয়ে কাজ করছে, যদিও তিনি বলেছিলেন যে, এর মূলে থাকবে ধর্মনিরপেক্ষতা এবং বাকস্বাধীনতা।
দ্বৈত প্রথা ভাঙ্গার জন্য একটি দল গঠন করা ছাড়া আমাদের অন্য কোন পরিকল্পনা নেই, বলেছেন ২৪ বছর বয়সী বিশ্ব ধর্মের স্নাতকের একজন ছাত্র।
স্বৈরাচারী শাসনের আরেকটি অধ্যায় এড়াতে হাসিনা কর্তৃক নির্বাচিত নির্বাচন কমিশনের সংস্কার করতে প্রাতিষ্ঠানিক পরিবর্তনের বাইরে কী নীতি অনুসরণ করতে চায় তা সুনির্দিষ্ট করেনি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের ছাত্র নেতারা।
নাহিদ ইসলাম (২৬), যিনি একজন অন্যতম সমন্বয়ক এবং ড. ইউনূসের উপদেষ্টা মন্ডলীর একজন উপদেষ্টা বলেছেন, “আন্দোলনের চেতনা ছিল একটি নতুন বাংলাদেশ তৈরি করা, যেখানে কোনো ফ্যাসিবাদী বা স্বৈরাচারী ফিরে আসতে পারবে না, আমাদের কাঠামোগত সংস্কার প্রয়োজন, যা করার জন্য অবশ্যই কিছু সময় প্রয়োজন।”
তথ্য প্রযুক্তি উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম বলেন, যত দ্রুত সম্ভব নতুন নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য আওয়ামী লীগ এবং বিএনপির আহ্বান বিবেচনা করছে না সরকার।
দেশের শাসনব্যবস্থার পরিবর্তন, অন্যান্য কর্মকর্তাদের মধ্যে, প্রধান বিচারপতি, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর এবং পুলিশ প্রধানকে বাধ্য করেছে পদত্যাগ করতে যারা ছাত্রদের উপর দমন-পীড়ন তদারকি করতেন।
ইউনূসের ডি ফ্যাক্টো পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে কর্মরত একজন কূটনীতিক তৌহিদ হোসেন রয়টার্সকে বলেন, শিক্ষার্থীরা টেকনোক্র্যাটদের সঙ্গে তাদের রাজনৈতিক পরিকল্পনা নিয়ে কোন আলোচনা করেনি। তবে “রাজনৈতিক দৃশ্যপট পরিবর্তন হতে চলেছে কারণ আমরা মূলত তরুণ প্রজন্মকে রাজনীতি থেকে বাদ রেখেছি।”
ইউনূস, একজন ৮৪ বছর বয়সী অর্থনীতিবিদ যার ক্ষুদ্রঋণ কর্মসূচি বিশ্বব্যাপী লক্ষ লক্ষ মানুষকে দারিদ্র্য থেকে বের করে আনতে সাহায্য করেছে, তিনি নৈতিক কর্তৃত্ব বজায় রাখেন কিন্তু তার প্রশাসন কী অর্জন করতে পারে তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে।
সাংবিধান বিশেষজ্ঞ শাহদীন মালিক বলেছেন, “আইনগত এবং রাজনৈতিকভাবে আমরা সম্পূর্ণরূপে অজানা জলে রয়েছি।” “এই অন্তর্বর্তী সরকারের ক্ষমতা সংজ্ঞায়িত করা হয়নি কারণ এই বিষয়ে কোন সাংবিধানিক বিধান নেই।”
রয়টার্স বিক্ষোভের পরিপ্রেক্ষিতে রয়ে যাওয়া বিভাজন এবং নতুন সরকারের সম্ভাবনার মূল্যায়ন করতে প্রধান ছাত্রনেতা, হাসিনার ছেলে এবং উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ, বিরোধী রাজনীতিবিদ এবং সেনা কর্মকর্তাসহ ৩০ জনেরও বেশি লোকের সাক্ষাৎকার নিয়েছে।
হাসিনার ছেলে বলেছিলেন যে তিনি বাংলাদেশে ফিরে আসার আশা করছেন। সজীব ওয়াজেদ যুক্তরাষ্ট্র থেকে রয়টার্সকে বলেন, “রাজনৈতিক দলগুলো কোথাও চলে যাচ্ছে না। আপনি আমাদের নিশ্চিহ্ন করতে পারবেন না। আজ হোক বা কাল হোক, আওয়ামী লীগ বা বিএনপি আবার ক্ষমতায় আসবে। আমাদের সাহায্য ছাড়া, আমাদের সমর্থক ছাড়া আপনারা বাংলাদেশে স্থিতিশীলতা আনতে পারবেন না।”
১৯ জুলাই, হাসিনার সমর্থকরা এবং পুলিশ কর্তৃপক্ষ, ছাত্র বিক্ষোভকারীদের সাথে লড়াই করার সময় আন্দোলনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ তিন জন নাহিদ ইসলাম, আসিফ মাহমুদ এবং আবু বাকের মজুমদারকে আটক করে। নেতাদের আটক করার সময় পূর্বের বিক্ষোভগুলি ম্লান হয়ে গিয়েছিল কিন্তু এবারের বিক্ষোভে উত্তেজনা দেখা দিয়েছে।
শিক্ষার্থীরা এক মাসেরও বেশি সময় ধরে বিক্ষোভ করলেও তারা মূলত পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসেই সীমাবদ্ধ ছিল। এরপর ১৪ জুলাই শেখ হাসিনা সংবাদ সম্মেলন করেন। আধঘণ্টা পরে, তিনি অর্ধ-হাস্যে বিক্ষোভকারীদের “রাজাকার” বলে উল্লেখ করেন। তার এই মন্তব্যটি প্রচণ্ড গণ-বিক্ষোভের জন্ম দিয়েছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে, পুরুষ বিক্ষোভকারীদের সাথে মহিলা ছাত্ররা যোগ দিয়েছিল যারা তাদের আবাসনের পাঁচটি হল ভেঙ্গে বেরিয়েছিল, যার গেট সন্ধ্যায় তালাবদ্ধ থাকে, উমামা ফাতেমা (২৫), একজন মহিলা ছাত্র সমন্বয়কারী বলেন, পরদিন আওয়ামী লীগের ছাত্র সংগঠন বিক্ষোভ দমন করতে গেলে লাঠি, লোহার রড ও পাথর নিয়ে সংঘর্ষ শুরু হয়।