শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মামলা

শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনালে গণহত্যার অভিযোগ।

 

বাংলাদেশে ২০২৪ সালের জুলাই মাসে শুরু হয় সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কার আন্দোলন। এই আন্দোলন চলাকালীন আন্দোলনকারী ছাত্রদের উপর পুলিশ নির্বিচারে গুলি চালালে শত শত ছাত্র জনতা মারা যায়। এই কোটা সংস্কার আন্দোলনের সময় হত্যা, গণহত্যা ও নির্যাতনের ঘটনায় আওয়ামীলীগের সভাপতি ও বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে হত্যা, গণহত্যা ও নির্যাতনের অভিযোগ তদন্তের জন্য আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেছেন এক আইনজীবী।

 

বুধবার (১৪ আগস্ট ২০২৪) এ করা এই আবেদনে আওয়ামী লীগের সভাপতি হিসাবে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে, দল হিসেবে আওয়ামী লীগ এবং দলের সাধারণ সম্পাদক হিসাবে ওবায়দুল কাদেরসহ আরও ৯ জনের বিরুদ্ধে হত্যা, গণহত্যা ও নির্যাতনের তদন্তের আবেদন দেওয়া হয়েছে।

 

সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কার আন্দোলনের সময় নিহত বাগেরহাটের আরিফ আহমেদ সিয়ামের বাবা মো. বুলবুল কবির এর পক্ষে বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের বিজ্ঞ আইনজীবি অ্যাডভোকেট গাজী মনোয়ার হোসেন তামিম বুধবার (১৪ আগস্ট ২০২৪) এ আবেদন জমা দেন।

 

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থার উপ-পরিচালক (প্রশাসন) মো. আতাউর রহমান বলেন, “আমরা অভিযোগটি গ্রহণ করেছি। এরপর পেপার ওয়ার্ক হবে, সারাদেশে যেখানে যেখানে ঘটনা ঘটানো হয়েছে সেসব জায়গায় গিয়ে তদন্ত করা হবে। তদন্ত শেষে প্রতিবেদন জমা দেওয়া হবে।

 

 

আইন বিচার ও সংসদ বিষয়ক উপদেষ্টা আসিফ নজরুলের এ বিষয়ে বলেন, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইনে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় সংঘটিত গণহত্যার বিচার করতে কোন বাঁধা নাই এবং তাদের বিচার করতে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার উদ্যোগ গ্রহণ করছে।

 

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের গঠন-

শেখ হাসিনার সরকার ২০০৯ সালে দ্বিতীয় বার ক্ষমতায় আসার পর বিচারপতি নিজামুল হককে চেয়ারম্যান, বিচারপতি এ টি এম ফজলে কবীর ও অবসরপ্রাপ্ত জেলা জজ এ কে এম জহির আহমেদকে সদস্য করে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল গঠন করা হয়েছিল ২০১০ সালের ২৫ মার্চ।

 

দুই বছরের সেনা শাসনের পর ২০০৯ সালে ক্ষমতায় এসে শেখ হাসিনা সরকার একাত্তরের যুদ্ধাপরাধের বিচারে ২০১০ সালের ২৫ মার্চ বিচারপতি নিজামুল হককে চেয়ারম্যান, বিচারপতি এ টি এম ফজলে কবীর ও অবসরপ্রাপ্ত জেলা জজ এ কে এম জহির আহমেদকে সদস্য করে গঠন করে হয় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।

 

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের গঠনের উদ্দেশ্য-

একাত্তরের যুদ্ধাপরাধের বিচার করার জন্য এই আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল গঠন করা হয়েছিল।

 

ছাত্র-জনতার তুমুল গণ আন্দোলনের মুখে ২০২৪ সালের ৫ই অগাস্ট শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে পলায়ন করে দেশ ত্যাগ করার ৯ দিন পর বুধবার (১৪ আগস্ট ২০২৪) সেই ট্রাইব্যুনালেই শেখ হাসিনার বিচারের জন্য আবেদন করা হল।

 

আবেদনকারী আইনজীবী অ্যাডভোকেট গাজী মনোয়ার হোসেন তামিম সাংবাদিকদের বলেন, “১৫ জুলাই ২০২৪ থেকে ৫ অগাস্ট ২০২৪ পর্যন্ত বাংলাদেশে ছাত্র-জনতার উপরে যে গণহত্যা চালানো হয়েছে সেই গণহত্যাকে গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ হিসেবে তদন্ত করার জন্য আমি একটি দরখাস্ত দায়ের করেছি। কারণ এটি কোন সাধারণ ক্রাইম নয়। এটি একটি সিস্টেম ক্রাইম এবং এটা পরিকল্পিত ক্রাইম। এটা শুধুমাত্র এই ট্রাইব্যুনালেই হওয়া সম্ভব।”

 

শেখ হাসিনা ছাড়াও আরও যাদের বিরুদ্ধে তদন্তের আবেদন করা হয়েছে তারা হলেন,

(১) সাবেক সেতুমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের,

(২) সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল,

(৩) সাবেক ডাক ও টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক,

(৪) সাবেক তথ্য প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ আলী আরাফাত,

(৫) পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন,

(৬) সাবেক অতিরিক্ত পুলিশ মহাপরিদর্শক,

(৭) ঢাকা মহানগর পুলিশের সাবেক গোয়েন্দা প্রধান হারুন অর রশীদ,

(৮) ঢাকা মহানগর পুলিশের সাবেক কমিশনার হাবিবুর রহমান ও RAB এর সাবেক মহাপরিচালক মো. হারুন অর রশিদ।

 

এছাড়াও, এসব আসামির পাশাপাশি নাম উল্লেখ না করে সাবেক শেখ হাসিনার সরকারের সকল মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী, সংসদ সদস্য ও ঢাকা মহানগর পুলিশের বিভিন্ন কর্মকর্তা এবং সদস্যদের বিরুদ্ধেও আইনানুগ ব্যবস্থা চাওয়া হয়েছে আবেদনে।

 

এছাড়াও একই অপরাধে উল্লেখিত ব্যক্তিদের পাশাপাশি তাদের দল ও সংগঠন হিসেবে আওয়ামী লীগ,  ছাত্রলীগ ও যুবলীগের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়ার আবেদন জানানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন অ্যাডভোকেট তামিম।

 

অ্যাডভোকেট তামিম আরও বলেন, ট্রাইবুনালের তদন্ত সংস্থা অভিযোগটি তদন্ত করার পর সত্যতা পেলে মামলা করার সুপারিশ করে প্রতিবেদন দিবে। তারপর এই অভিযোগে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনালে মামলা দায়ের করা হবে।

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *